মহিলা সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করায় তুমুল বিতর্কের মুখে অবশেষে পিছু হটলেন আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। রবিবার নয়া দিল্লিতে আবার একটি সাংবাদিক সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন তিনি। আর সেই সম্মেলনে মহিলা সাংবাদিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এক সপ্তাহের ভারত সফরে এসেছেন আফগান বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। এরমধ্যে ১০ অক্টোবর অর্থাৎ গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন, যেখানে কোনও মহিলা সাংবাদিককে ডাকা হয়নি। ওই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক থেকে সাংবাদিক মহল, দেশের সর্বত্র জুড়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। ইন্ডিয়ান উইমেন’স প্রেস কর্পস এবং এডিটরস গিল্ড অব ইন্ডিয়া দু’টি সংগঠনই বিবৃতি দিয়ে জানায়, এই ধরনের বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত কোনওভাবেই ন্যায় সঙ্গত নয়। তাঁরা বলেন, ‘ভিয়েনা কনভেনশন বা অন্য কোনও কূটনৈতিক প্রোটোকলের আড়ালে লিঙ্গবৈষম্যকে বৈধতা দেওয়া যায় না।’ এরপরে বিতর্ক বাড়তেই শনিবার আফগান বিদেশমন্ত্রীর দল নতুন করে সাংবাদিক সম্মেলনের আমন্ত্রণ পাঠায়। নতুন আমন্ত্রণে উল্লেখ করা হয়েছে, রবিবারের সাংবাদিক সম্মেলন হবে ‘ইনক্লুসিভ’, অর্থাৎ পুরুষ ও মহিলা সব সাংবাদিকদের জন্য উন্মুক্ত। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রক আন্তর্জাতিক সমালোচনার চাপ কাটানোর চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
আফগান বিদেশমন্ত্রীর সাফাই
শুক্রবার বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করেন আফগান মন্ত্রী মুত্তাকি। আলোচনার বিষয় ছিল দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, মানবিক সহায়তা এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা। কিন্তু সেই বৈঠকের ছবি ছড়িয়ে পড়তেই দেখা যায়, প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত সবাই পুরুষ সাংবাদিক। একজনও মহিলা সাংবাদিক সেখানে ছিলেন না। এই দৃশ্য প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবাদে সরব হন বহু সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা। এরপরেই সামগ্রিক ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করেন তালিবান সরকারের মন্ত্রী। রবিবার তিনি জানান, ‘সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে, এটি স্বল্প সময়ের নোটিসে আয়োজিত হয়েছিল এবং সাংবাদিকদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছিল, এবং যে অংশগ্রহণের তালিকা উপস্থাপন করা হয়েছিল তা খুবই সুনির্দিষ্ট ছিল। তাই এটি কেবল একটি প্রযুক্তিগত সমস্যা ছিল… আমাদের সহকর্মীরা সাংবাদিকদের একটি নির্দিষ্ট তালিকা বানিয়ে আমন্ত্রণ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং এর বাইরে অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল না।’ অন্যদিকে বিতর্ক বাড়তেই শনিবার বিবৃতি দিয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানায়, ওই প্রেস কনফারেন্সের সঙ্গে তাদের কোনও যোগ ছিল না। মন্ত্রকের দাবি, ‘এই সাংবাদিক সম্মেলন সম্পূর্ণ তালিবান প্রতিনিধিদলের উদ্যোগে হয়েছিল, ভারত সরকারের কোনও ভূমিকা ছিল না।’

২০২১ সালে তালিবান পুনরায় আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরার পর এটাই সেখানকার তালিবান সরকারের সর্বোচ্চ পদস্থ নেতার প্রথম ভারত সফর। তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি গত বৃহস্পতিবার ভারতে আসেন এবং শুক্রবার বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠক ভারত-আফগান সম্পর্কের ক্ষেত্রে নয়া মোড় বলে মনে করা হচ্ছে। নয়া দিল্লি ঘোষণা করেছে যে, কাবুলে অবস্থিত ভারতীয় কারিগরি মিশনকে দূতাবাসে উন্নীত করা হবে। ভারতের এই পদক্ষেপ আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী স্বাগত জানিয়েছেন। এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ভারত, রাশিয়া, চিন এবং আরও সাতটি দেশ যৌথভাবে আফগানিস্তানে বিদেশি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের বিরোধিতা করেছে। তবে ঐতিহাসিকভাবে ভারত ও আফগানিস্তানের সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ। কিন্তু ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার পর তালিবান ক্ষমতায় এলে ভারত কাবুলে নিজের দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। যদিও ভারত এখনও তালিবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি, তবে ক্রমশ যোগাযোগ ও সংলাপ বাড়াচ্ছে দুই দেশ।