বিশ্বকাপ জিতলে ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলকে ১২৫ কোটি টাকা পুরষ্কার দেওয়া হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। তবে এই মহিলা দলের প্রাক্তন সদস্যরাই একসময় ভ্রমণ করতেন ট্রেনে। এমনকী প্রাক্তন মহিলা ক্রিকেটাদের অনেককে মাটিতে পর্যন্ত শুতে হয়েছিল। তবে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা আজ প্রচুর অর্থ পান। বর্তমানে নারীদের ম্যাচ ফি পুরুষদের সমান। মহিলা দল এখন পাঁচ তারকা হোটেলে থাকে। তবে একটি সময় ছিল, যখন মহিলা দলের ২০ জন খেলোয়াড়ের জন্য বরাদ্দ থাকত ৪টি টয়লেট। ডরমিটরিতে মেঝেতে ঘুমাতে হত তাঁদের। প্লাস্টিকের পাত্রে ডাল পরিবেশন করা হত ক্রিকেটারদের। ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট এমনই সব ‘অভাবের গল্পে’ ভরা।
আজ বিশ্বকাপ ফাইনালে নামতে চলেছে হরমনের দল। এর আগে গতকাল নভি মুম্বইতে তাঁদের প্র্যাক্টিস দেখতেও স্টেডিয়ামের বাইরে বিশাল ভিড় ছিল। তবে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটে একটা সময় কোনও অর্থ ছিল না এবং কোনও স্পনসর ছিল না। এই কারণে, বিদেশ সফর কঠিন ছিল। তবে কিছু দৃঢ় ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন মহিলা ছিলেন যারা ‘শো মাস্ট গো অন’ প্রবাদে বিশ্বাস করতেন। এবং তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন নূতন গাভাসকর। নূতন ১৯৭৩ সালে ভারতে মহিলা ক্রিকেট আন্দোলনের অন্যতম পতাকাবাহক ছিলেন। মহিলা খেলোয়াড়রা তখন ক্রিকেটের প্রতি তাঁদের ভালবাসার জন্য খেলেছিলেন এবং গর্বের সাথে ‘ইন্ডিয়া’ জার্সি পরেছিলেন। আইসিসি মহিলা ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালের প্রাক্কালে কিংবদন্তি ক্রিকেটার সুনীল গাভাসকরের ছোট বোন নূতন পিটিআইকে বলেন, ‘ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (ডাব্লুসিএআই) ১৯৭৩ সালে গঠিত হয়েছিল। ২০০৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় দল নির্বাচন করত এই সংগঠনই। এরপরে অবশেষে নারী ক্রিকেটের দায়িত্ব নেয় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। কিন্তু যখন আমি পিছনে ফিরে তাকাই, সেই দিনগুলিতে অর্থ ছিল না তবে সমস্ত মহিলা খেলোয়াড়রা খেলার প্রতি আবেগ এবং ভালোবাসার জন্য খেলতেন।’

দীর্ঘদিন ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন নূতন গাভাসকর। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিলাম, তখন আমরা আন্তর্জাতিক নারী ক্রিকেট কাউন্সিলের অধীনে ছিলাম। এবং আমাদের বলা হয়েছিল যে মহিলা ক্রিকেট কোনও পেশাদার খেলা নয়। তখন কোনও অর্থ ছিল না কারণ আমাদের পেশাদার হিসাবে বিবেচনা করা হত না। আন্তর্জাতিক সফরের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা খুব কঠিন ছিল। তখন তহবিল সংগ্রহের জন্য সর্বত্র দৌড়াতাম। তিনি বলেন, ‘একবার নিউজিল্যান্ড সফর হয়েছিল, যেখানে মেয়েদের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করার জন্য আমাদের কাছে অর্থ ছিল না। কেউ বিশ্বাস করবে না যে আমাদের দল এনআরআইদের পরিবারের বাড়িতে ছিলেন। অন্য এক সফরে মন্দিরা বেদী আমাদের সাহায্য করেছিলেন। তিনি একটি বিখ্যাত ব্র্যান্ডের হীরার বিজ্ঞাপনের শুটিং করেছিলেন। সেখান থেকে যা টাকা পেয়েছিলেন, তিনি তা ডাব্লুসিএআইকে দিয়েছিলেন। তা দিয়ে আমরা ভারতের ইংল্যান্ড সফরের জন্য বিমানের টিকিটের ব্যবস্থা করেছিলাম। একটা সময় ছিল যখন এয়ার ইন্ডিয়া খেলোয়াড়দের জন্য বিমানের টিকিট স্পনসর করত।
চলতি বিশ্বকাপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সেদিন সব জাতীয় সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় জেমিমা রদ্রিগেজের কৃতিত্ব দেখে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।’আমার মনে আছে, আগে তো ভারতীয় মহিলারা জিতেছে বা ভারতীয় মহিলারা হেরে গেছে, এমন শিরোনাম দিয়ে খুব কমই কভারেজ পেতাম।’ নূতন নিজেও জাতীয় স্তরের ক্রিকেটার ছিলেন। ১৯৭০ এবং ১৯৮০-র দশকের কথা বলতে গিয়ে নূতন আন্তঃরাজ্য ম্যাচগুলির কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, কিছু দলের মাত্র তিনটি করে ব্যাট থাকত। তিনি বলেন, ‘জাতীয় প্রতিযোগিতায় আমি এটা দেখেছি। প্রাইভেট ক্রিকেট কিট ব্যয়বহুল ছিল, তখন সেটা বিলাসিতা বলে মনে করা হত। একটি দলে তিনটি করে ব্যাট ছিল। দুই ওপেনারের দুটি ব্যাট ছিল এবং তিন নম্বর ব্যাটে তৃতীয় ব্যাটার নামতেন। ওপেনার আউট হয়ে গেলে চার নম্বর খেলোয়াড় তাঁর ব্যাট ও লেগ গার্ড পেতেন। ট্রেনে জেনারেল কামরায় যাতায়াত করতে হত এবং মহিলারা তাঁদের নিজের পকেট থেকে ট্রেনের ভাড়া মেটাতেন। প্রায়শই দলগুলি ২০ জনের জন্য চারটি ওয়াশরুম পেত। কম বাজেটে টুর্নামেন্ট আয়োজন করায় ডাল পরিবেশন করা হত বড় প্লাস্টিকের পাত্রে। ডায়ানা এডুলজি, শান্তা রঙ্গস্বামী এবং শুভাঙ্গী কুলকার্নির মতো খেলোয়াড়দের জন্য ম্যাচ ফি একটি অনন্য জিনিস ছিল। ম্যাচ ফি ছিল না, কারণ অ্যাসোসিয়েশনের কাছে কোনও টাকা ছিল না। তিনি বলেন, ‘আজ আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ হয়, যখন দেখি নারী দল বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করছে, পাঁচতারা হোটেলে থাকছে এবং তাদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য প্রাপ্য সব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে।’