মরদেহ নিয়ে যাওয়ার পথে চরম দুর্ভোগের এক মর্মান্তিক চিত্র সামনে এল বাংলায়। ঘটনাটি মালদহ জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের তুলসীহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের বসতপুর গ্রামের। স্থানীয় এক প্রভাবশালী তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে সেচ দফতরের সরকারি জমি দখল করে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যার ফলস্বরূপ শবদেহ কবরস্থানে নিয়ে যেতে হল মহানন্দা নদীর মরা খাতে কোমর সমান জল ভেঙে। এই ঘটনার ভিডিয়ো সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতেই গোটা এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য এবং শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
স্থানীয়দের অভিযোগ বসতপুর গ্রামের তৃণমূল কর্মী সাত্তার আলির বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সেচ দফতরের প্রায় ৫০ শতক জমি বেআইনিভাবে দখল করে চাষাবাদ করছেন। মূলত এই সরকারি জমির উপর দিয়েই তৈরি কাঁচা রাস্তা ব্যবহার করে বসতপুর গ্রামের বাসিন্দারা তাদের প্রিয়জনদের মরদেহ কবরস্থান ও শ্মশানে নিয়ে যেতেন। কিন্তু সেই রাস্তা জোর করে বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গ্রামের মানুষ। এর ফলে শ্মশান বা কবরস্থান যেতে তাদের প্রায় দুই কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে আঙ্গারমুনি গ্রাম হয়ে যেতে হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে বসতপুর গ্রামের বধূ সোলো বিবির মৃত্যু হলে গ্রামবাসীরা পথ অবরোধের চরম পরিণতি প্রত্যক্ষ করেন। রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে বাধ্য হয়েই গ্রামবাসীদের একসঙ্গে কোমর সমান জল পেরিয়ে মরা মহানন্দা নদী পার করে কবরস্থানে মরদেহ নিয়ে যেতে হয়। এই দৃশ্যই রাজ্যের গ্রামীণ অবকাঠামো এবং প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার উপর বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে।

গ্রামবাসীদের দাবি, সেচ দফতরের জায়গা দখল এবং রাস্তা বন্ধ করা নিয়ে সাত্তার আলির পরিবারের সঙ্গে তাদের একাধিকবার গোলমাল হয়েছে। এমনকি হরিশ্চন্দ্রপুর থানা, ব্লক প্রশাসন, সেচ দফতর এবং জেলাশাসকের কাছে গণস্বাক্ষর করে দাবিপত্রও জমা দেওয়া হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে পাঁচ মাস আগে সেচ দফতরের লোক মাপজোক করতে এলেও কাজটি অসম্পূর্ণ রেখেই তারা চলে যান। বারবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভ এখন চরমে। যদিও অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী সাত্তার আলি সরকারি জায়গা দখলের কথা আংশিক স্বীকার করলেও, রাস্তা বন্ধ করার অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। এদিকে এই ঘটনা সামনে আসতেই সরব হয়েছে বিরোধী শিবির। জেলা বিজেপি সম্পাদক রূপেশ আগরওয়ালের কড়া মন্তব্য, এই ঘটনা রাজ্যের উন্নয়নের বেহাল দশার প্রমাণ। যেখানে মৃতদেহ নিয়ে যেতেও এই রকম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তৃণমূলের মদত আছে বলেই সরকারি জায়গা দিনের পর দিন এভাবে দখল হয়ে রয়েছে।অন্যদিকে, চাঁচল বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ এই অভিযোগ অস্বীকার করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।